ইউনিভার্স বাংলা অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৫৮ | আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৫৮
১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থেকে যে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে কোনো চমক বা নতুনত্ব নেই। গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি জানানো হচ্ছিল, তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোই। এমনকি যুগপৎ আন্দোলনের যে রূপরেখা ঘোষণার কথা নেতারা জানিয়ে আসছিলেন, সেটিও হয়নি।
জনসভাস্থল নিয়ে নানা নাটকীয়তা শেষে শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে এই সমাবেশ হয়। এতে জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাতজন সদস্যের পদত্যাগ ছাড়া বাকি বক্তব্য আগের ৯টি বিভাগীয় সমাবেশের মতোই এসেছে।
এই কর্মসূচি থেকে বড় কোনো কর্মসূচি আসার বিষয়ে যে আলোচনা ছিল, সেটিও হয়নি। বিএনপির নেতাদের বক্তব্য উঠে এসেছে, গোলাপবাগের কর্মসূচি গা গরমের মতো, ‘আসল যুদ্ধ’ আসছে পরে।
এমনকি যুগপৎ আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়ে যেসব দলের সঙ্গে আলোচনা করছিল, তারাও এই সমাবেশে যোগ দেয়নি, যদিও আগের বিকেলে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের গোলাপবাগে অংশ নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছিল।
বিএনপির এই সমাবেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে, যদিও নেতা-কর্মীরা আগের দিন বিকাল ৪টার পর থেকেই ময়দানে যেতে থাকেন।
দীর্ঘ বক্তৃতাপর্বের মাঝামাঝি সময়ে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুহিম ফারহানা জানান, তাদের দলের সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবেন। রোববারই জমা পড়বে তাদের পদত্যাগপত্র।
পরে সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঘোষণা করেন তাদের ১০ দফা দাবি।
কী আছে ১০ দফায়
- # বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
- # ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
- # নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
- # খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তা না করা।
- # ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা।
- # বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।
- # নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
- # বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
- # গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
- # আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।
‘গোলাপবাগ ওয়ার্মআপ, শেষ যুদ্ধ আসছে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ঢাকায় তারা যে সমাবেশটি করেছেন, সেটি গা গরমের। সামনে ‘শেষ যুদ্ধ’ হতে চলেছে, আর সেই যুদ্ধে বিএনপি জয়লাভ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ১০ টা মিটিং করেছি। আজকে শেষ মিটিং। এই মিটিংকে আমরা বলব, আমরা ওয়ার্ম ওয়া্র্ক করেছি। আজকের সমাবেশ থেকে আমাদের প্রধান অতিথি সরকার পতনের ১০ দফা ঘোষণা করবেন। পরবর্তী কর্মসূচির রূপরেখা ঘোষণা হবে। তারপর থেকে শুরু হবে রাজপথের সংগ্রাম। এর পরে হবে আমাদের শেষ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করব।’
তিনি বলেন, ‘গত ৭ তারিখে আমাদের উপর সরকারের কর্মচারীরা যে হামলা করেছে, তা ১৯৭১ সালেব ২৫ মার্চের হানাদার বাহিনীর হামলার থেকে কম কিছু না। আমরা বলতে চাই, ক্ষমতা বেশিদিন থাকবে। ইতিহাস পড়েন। শিক্ষা নেন।
‘মানুষ ক্ষেপে গেছে, যত বাধায় দেন, যত গুলিই করেন, মানুষের কাছে সেটা কিছুই না। যার কারণে কাল অনুমতি পাওয়ার পরপর এই মাঠ কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল।’
১০ দফার ঘোষণার পর বিএনপি আর পিছু হটবে না জানিয়ে স্থায়ী কমিটির এরক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করে, আহত করে, নিহত করে ভয় দেখাতে চেয়েছিল। আমাদের কেউ ভয় পায়নি।
‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল। এই মাদল কে বাজাচ্ছে? এই মাদল বাজাচ্ছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই মাদল বাজাচ্ছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আপনারা সেই ছন্দে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আপনারা উজ্জীবিত হয়েছেন। এটি ধরে রাখুন। সামনে কাজে লাগব।
‘তারা আমদের যতই খেলে দেয়ার চেষ্টা করুক। এবার কেউ পিছু হটবে না। আজকের ঘোষণার পর একদফা আন্দোলনে যাব। জনগণকে নিয়ে সরকার পতনের লড়াই করে যাব।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে ঢাকায় হরতাল পালন হচ্ছে। এই হরতাল ডেকেছে সরকার। বাস নাই গাড়ি নাই। থমথমে। কী বুঝলেন?
‘এই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হাতে মাল নিয়ে পিকেটিং করছে। এই মাল মানে বুঝেন? এই মাল হলো অস্ত্র। তারা ঢাকার এন্ট্রি গেটে পিকেটিং করছে।’
তিনি বলেন, ‘এই পিকেটিং মানুষ কখন করে? হরতাল কখন করে? সরকার কী আছে? সরকার নেই। বাংলাদেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না।’